বিশেষ প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ১০ নং হরিরামপুর ইউনিয়ন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটি অনুমোদন এবং ঘোষিত কমিটি সপ্তাহের ব্যবধানে পরিবর্তন নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংকট নিরসনে সাবেক সাংসদ সদস্য এ. জেড. এম. রেজওয়ানুল হক সাহেব এর হস্তক্ষেপ দাবি করে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন ১০ নং ইউনিয়ন বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, গত ০৩ জানুয়ারি ২৫ইং উপজেলার ১০নং হরিরামপুর ইউনিয়ন শাখা কৃষক দলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূনাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি ও উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা কৃষক দল সভাপতি মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক ও উপজেলা কৃষক দল সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোকছেদুল রহমান সাক্ষরিত কমিটিতে মধ্যপাড়ার মরহুম আব্দুর রফিক মেম্বার এর ছেলে বিশিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী মোঃ সাইমুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়।
পরবর্তীতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১ই জানুয়ারি/২৫ইং আবারো মোঃ সাইমুল ইসলামকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে একই সভাপতি সম্পাদক কর্তৃক সাক্ষরিত আর একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ১১ই জানুয়ারি ঘোষিত কমিটিতে মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোকছেদুল রহমানের অনুমোদিত স্বাক্ষর থাকলেও কোন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। একটি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করে খেয়ালখুশি মত একই ইউনিয়নে দুই টি কমিটি ঘোষণা এবং দুই কমিটিতে পৃথক দুজনকে সভাপতি করা হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন প্রকৃত সভাপতি কে? বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল এবং সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে স্হানীয় নেতাদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক সাংসদ সদস্য এ.জেড. এম. রেজওয়ানুল হক এর নিকট জটিলতা নিরসনে হস্তক্ষেপ দাবি করে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে স্বাক্ষর কারী গন ১০ নং হরিরামপুর ইউনিয়ন বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে সম্পৃক্ত আছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং জানি মোঃ সাইমুল ইসলাম পিতা মরহুম আব্দুর রফিক মেম্বার তিনি প্রকৃত পক্ষেই বিএনপির একজন ত্যাগী নিবেদিত প্রান কর্মি। দলের প্রয়োজনে যে কোন মুহূর্তে অগ্রসৈনিক। তিনি দলের ডাকে সাড়া দিয়ে সম্মুখ ভাগে অগ্রসর সৈনিক হিসেবে দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন এবং আছেন। সাইমুল ইসলামের গোটা পরিবার বিএনপির রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী ও সম্পৃক্ত। তাকে ৩ রা জানুয়ারি কৃষক দলের সভাপতি পদে চুড়ান্ত ভাবে মুল্যায়িত করায় আমরা গর্বিত। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো তারিখ বিহীন কমিটি তৈরি করায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠায় আমরা মর্মাহত। তাই দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় মোঃ সাইমুল ইসলামকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ইউনিয়ন সভাপতি পদে বহাল রাখার জন্য জোর সুপারিশ সহ অনুরোধ করছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারি গন হলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সভাপতি ( ভারপ্রাপ্ত) ও মধ্যশিলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ এন্তাজুল হক, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মোঃ আবুল কাসেম মাষ্টার, উপজেলা বিএনপির সদস্য মোঃ আখতারুজ্জামান নিখিল, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও সিনিয়র শিক্ষক রবিউল ইসলাম, ৭ নংওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সানোয়ার হোসেন, ইউনিয়ন যুবদল সহ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম রুবেল, ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মুত্তালেব, উপজেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সুফিয়ান কাদের, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নুরুন নবী পাইকাড়, ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মেজবাহুল শাহ, ৯ নং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোছাব্বর আলী, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির উপদেষ্টা ফয়জার রহমান, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির উপদেষ্টা জোনাব আলী, ১০ নং হরিরামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী মোঃ মমিনুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইব্রাহিম খলিল, ৭ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক জেনারেল ভুট্টু, ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর আহমেদ শাহ, দিনাজপুর সঙ্গীত ডিগ্রি কলেজের সহ অধ্যাপক ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ডাঃ এম. এ. মিলন ফারাজী, সহ সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়ন বিএনপি জাহেদুল হক, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী সিংগাদার, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আলী, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দূর্জয়, ইউনিয়ন যুবদলের সহ সভাপতি নুর আলম, ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ সভাপতি জিয়াউর রহমান এবং একই ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে সাইমুল ইসলাম জানান, প্রায় চার মাস পূর্বে ইউনিয়নের মৌলভীবাজারে কৃষক দলের কমিটি গঠনের লক্ষে উপজেলা নেতৃবৃন্দ সমবেত হয়েছিলেন সেখানে আমরা আমাদের জনসমাগম ও জনসমর্থন প্রদর্শন করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বাস্তবতা যাচাই-বাছাই করে সিনিয়র নেতাদের মতামতের আলোকে আমাকে ৩/১/২৫ কৃষক দলের ইউনিয়ন সভাপতি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে চুড়ান্ত অনুমোদিত কমিটির কাগজ বুঝিয়ে দিয়েছেন। কমিটি অনুমোদন কপি গণমাধ্যমে গেলে আমার ছবি সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি এখনো বৈধ সভাপতি তবে হয়তো আমাকে হেও প্রতিপন্ন করতেই অনৈতিক ভাবে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আমার নাম প্রকাশ করা হয়েছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং অগ্রহনযোগ্য।
অভিযোগ রয়েছে ঝালাই ব্যবসায়ী বরিউল ইসলাম নামক একজন বিএনপির একনিষ্ট কর্মিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পরেও নাম ঘোষনার সময় তাঁকে পদ বন্চিত করায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক স্বেচ্ছাচারিতা মুলক ভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কমিটির ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মেতেছেন।
অধ্যাপক হাসান মাহমুদ বলেন, এভাবে অনুমোদিত কমিটি সভাপতির পদবী ইচ্ছে মতো পরিবর্তন অনাকাঙ্ক্ষিত এবং সাংগঠনিক কাঠামোর পরিপন্থী। সাইমুল ইসলাম আমাদের দলের জন্য নিবেদিত কর্মি তাকে নিয়ে তামাশা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সভাপতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সাইমুল ইসলাম কে সভাপতি পদে ঘোষণা দেওয়ার পর পদানত করা কোন ভাবেই গ্রহন যোগ্য নয় অবশ্যই তাকে স্বপদে বহাল রাখতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমিটি নিয়ে লুকোচুরি স্পষ্ট প্রতীয়মান -টাকার পিছে দুনিয়া ঘুরে তাদের ঘুরলে দোষ কি? এদিকে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজওয়ানুল হক সাহেব এর সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির ১০/১২ জন সাইমুল ইসলাম সহ সাক্ষাৎ করেছেন এবং সভাপতি সাহেব তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনে পরবর্তী করনীয় নির্ধারনে আশ্বস্ত করেছেন। তবে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেসুর রহমানের প্রশ্ন বিদ্ধ ভূমিকা আলোচকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সুফিয়ান কাদের বলেন, সাইমুল ইসলাম কে সভাপতি পদে চুড়ান্ত ঘোষণার পর কমিটি নিয়ে লুকোচুরি দলের জন্য শুভকর নয়। কৃষক দলের ইউনিয়ন সন্মেলন কে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই সচেতন মহলের অভিমত সিনিয়র বিএনপি নেতাদের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা বান্চনীয়।